দেশে গ্রিন ইয়ার্ড মাত্র চারটি!

Passenger Voice    |    ০২:২৩ পিএম, ২০২৪-০৩-০৪


দেশে গ্রিন ইয়ার্ড মাত্র চারটি!

দেশে পুরাতন জাহাজ ভাঙার সক্রিয় ৩৫টির অধিক শিপব্রেকিং ইয়ার্ড আছে। এর মধ্যে চারটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। এগুলো হলো কেআর শিপ রি-সাইকেলিং ইয়ার্ড, কবির স্টিল লিমিটেড, পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রি-সাইকেলিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এসএন করপোরেশন। এসব গ্রিন শিপইয়ার্ডের রূপান্তরে ৩০-৫০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। যদিও এসব ইয়ার্ডে এখনও গ্রিন ইয়ার্ড হিসাবে কোনো জাহাজ কাটা হয়নি।

জানা যায়, ষাটের দশকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট সমুদ্র উপকূলে ঝড়ে আটকে যাওয়া জাহাজ কুইন আল পাইন ভেঙে স্থানীয় কয়েকজন পুঁজিপতি এখানে জাহাজ ভাঙা শিল্পের সূচনা করেন। তারপর এ ব্যবসায় প্রচুর লাভের কথা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলতে থাকেন শিপইয়ার্ড। ফলে দুই দশক অর্থাৎ আশির দশকের মধ্যে উপজেলার ফৌজদারহাট থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প। একে একে গড়ে ওঠে ১৫৪টি জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান। কয়েক বছরের চাঙা ব্যবসায় ব্যাংকগুলোও বেশি মুনাফার আশায় এ শিল্পে অর্থায়ন করে। কিন্তু গত কয়েক বছরের মন্দা ও লোকসানের কারণে অধিকাংশ জাহাজ ভাঙার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত এ খাতের ৮৫টি প্রতিষ্ঠান গ্রিন ইয়ার্ড বাস্তবায়নে শিপ রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি প্ল্যান (এসআরএফপি) শিল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এছাড়া ম্যাক করপোরেশন, জিরি সুবেদার শিপ ইয়ার্ড, আরেফিন এন্টারপ্রাইজ, প্রিমিয়াম ট্রেড করপোরেশনসহ প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠানে হংকং কনভেনশন অনুসারে শিপইয়ার্ড আধুনিকায়নে কাজ চলমান আছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের চালু শিপইয়ার্ডগুলো দ্য শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং রুলস ২০১১, আন্তর্জাতিক আইন এবং ২০০৯ সালের চীনে অনুষ্ঠিত হংকং কনভেশন রুলস অনুযায়ী আমূল ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সব শিপব্রেকিং ইয়ার্ড হংকং কনভেনশন সার্টিফিকেশন রুলস অনুযায়ী গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তরিত হবে। সেক্ষেত্রে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারা গ্রিন শিপইয়ার্ড নির্মাণের দেখভাল করে, যেমন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আইআরএফ, জাপানি প্রতিষ্ঠান এনকেএ, ইতালীয় প্রতিষ্ঠান রিনার ও জার্মানির জিএসআরের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চুক্তিবদ্ধ হতে হয়।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) উপদেষ্টা কামাল আহমেদ বলেন, হংকং কনভেনশন সার্টিফিকেশন রুলস অনুযায়ী শিপইয়ার্ডগুলোকে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তর করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের বেশ কিছু শিপইয়ার্ড আধুনিকায়ন এবং শোভন কর্মপরিবেশ তৈরি করছে এবং আরও কিছু কাজ চলামন রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের প্রাণোদনা দেয়া উচিত। কারণ ডলার সংকটে আমাদের ব্যবসা আগের মতো নেই। অপরদিকে বিএসবিআরএর একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না থাকার শর্তে বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে রূপান্তরের জন্য কাজ করছে। চলতি বছরে বেশ কয়েকটি ইয়ার্ডের কাজ শেষ হবে। অথচ ইয়ার্ডগুলো যখন অনুন্নত ছিল, তখন জাহাজ ভাঙা শিল্প পরিবেশ অধিদপ্তরের কমলা শ্রেণীভুক্ত ছিল। নতুন আইনে এ শিল্পটিকে আবারও লাল শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। অনেক অর্থ ব্যয় করে ইয়ার্ডগুলো গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তর করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। লাল শ্রেণি হওয়ায় অনেক ধরনের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হচ্ছে। এমনিতে এলসি সংকটে ব্যবসার অবস্থা খারাপ।

এ বিষয়ে কেআর গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তসলিম উদ্দিন বলেন, আমাদের ইয়ার্ড এখন গ্রিন ইয়ার্ড। আমাদের পরিবেশ ও মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করে জাহাজ কাটার সক্ষমতা আছে, আর সক্ষমতা ব্যবহার করে আমরা দেশের সেরা গ্রিন শিপইয়ার্ড হব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, এখন কিছুটা মন্দা পরিস্থিতি থাকলেও জাহাজ ভাঙায় বিপুল সম্ভাবনা আছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দেড় বছর আগে সাহস করে গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে রূপান্তরের কাজ শুরু করি। এ গ্রিন শিপ ইয়ার্ডের কাজে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এখন সরকার এ খাতে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিতে পারে। কারণ আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বেড়েছে।